ঢাকা | বঙ্গাব্দ

ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার বাংলাদেশে তৎপরতা: তথ্য, গুজব ও উদ্বেগ

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : Jun 1, 2025 ইং
ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার বাংলাদেশে তৎপরতা: তথ্য, গুজব ও উদ্বেগ ছবির ক্যাপশন: সংগৃহীত
ad728

 ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার বাংলাদেশে তৎপরতা: তথ্য, গুজব ও উদ্বেগ

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশ সংক্রান্ত যেসব প্রতিবেদন সাম্প্রতিককালে প্রকাশ পাচ্ছে, তার অনেকগুলোতেই চাঞ্চল্যকর ও বিতর্কিত অভিযোগ তুলে ধরা হচ্ছে। এসব প্রতিবেদনে কখনো বলা হচ্ছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাকিস্তানি আইএসআই’র গোপন তৎপরতা চলছে, আবার কখনো দাবি করা হচ্ছে বাংলাদেশ সরকার চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে মিলে ভারতের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

ভারতীয় মিডিয়াতে প্রকাশিত কিছু বক্তব্যে বলা হয়েছে, পাকিস্তানি গোয়েন্দারা পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলায় নিয়মিত সফর করছেন এবং সেখান থেকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অস্থিরতা সৃষ্টি করার পথ খুঁজছেন। এমনকি লেফটেন্যান্ট জেনারেল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উপস্থিতির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। এর বিপরীতে, ভারতীয় বিশ্লেষকেরা হুমকি দিয়েছেন—যদি এমন কোনো ষড়যন্ত্র হয়, তাহলে ভারত বাংলাদেশকেও ‘বড় ধরণের’ জবাব দেবে। শিলিগুড়ি করিডোর, যা ভারতের ‘চিকেন নেক’ নামে পরিচিত, সেটিকে লক্ষ্য করে বাংলাদেশ ষড়যন্ত্র করছে—এমন অভিযোগও উঠেছে। এর পাল্টা হিসাবে ভারতীয় মিডিয়ায় উল্লিখিত হয়েছে, বাংলাদেশকেও তাদের নিজস্ব ‘চিকেন নেক’ অর্থাৎ ফেনী করিডোর নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

ফেনী করিডোর বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা এবং চট্টগ্রামের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করে। দেশের আমদানি-রপ্তানির সিংহভাগ এই পথেই হয়। ফলে এটি বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি প্রধান লাইফলাইন। ভারতীয় মিডিয়ায় ফেনী করিডোর দখলের হুমকি ও প্ররোচনা ক্রমেই বাড়ছে বলে দাবি উঠেছে দেশীয় বিভিন্ন মহলে। তাই ফেনীতে একটি সেনানিবাস ও বিমান ঘাঁটি স্থাপনের জন্য জোর দাবি জানানো হচ্ছে।

 গোপন তৎপরতা ও ‘র’-এর ভূমিকায় বিতর্ক

এতসব ভারতীয় অভিযোগের পটভূমিতে অনেকেই পাল্টা প্রশ্ন তুলছেন—যখন ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ (Research and Analysis Wing) বাংলাদেশে সক্রিয়, তখন চীন বা পাকিস্তানকে নিয়ে অভিযোগ কতটা যৌক্তিক? বহুদিন ধরেই শোনা যাচ্ছে, বাংলাদেশে ‘র’-এর বিশাল নেটওয়ার্ক রয়েছে। বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতা আ স ম আব্দুর রব বহুবার বলেছেন যে, বাংলাদেশে ‘র’-এর কমপক্ষে ৬০ হাজার সদস্য কাজ করছে। এমনকি তিনি দাবি করেন, ঢাকায় সরাসরি র-এর হটলাইন আছে যা দিল্লির সঙ্গে সংযুক্ত।

ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা ‘ইন্ডিয়া টুডে’ ২০১২ সালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে দাবি করা হয়, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সামরিক অভ্যুত্থানের আশঙ্কায় ভারত একটি গোপন চিঠি পাঠায় এবং প্রয়োজনে তাকে উদ্ধার করার পরিকল্পনাও করে ফেলে। সেই পরিকল্পনায় পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা থেকে হেলিকপ্টার গানশিপ পাঠানোর কথাও বলা হয়েছিল।

আন্তর্জাতিক মিডিয়া ও ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার

বিখ্যাত আন্তর্জাতিক সাময়িকী ‘দি ইকোনোমিস্ট’ একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে, যেখানে জনৈক ইশরাক নামক ব্যক্তি দাবি করেন যে, বাংলাদেশের সেনা ছাউনির ভেতরেই ‘র’-এর অফিস রয়েছে। তিনি আরও বলেন, সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান চলে। এই বক্তব্যের সাথে সুর মিলিয়েছেন মেজর জিয়াউল হকসহ আরও কয়েকজন, যাদের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে।

বেগম খালেদা জিয়াও একবার মন্তব্য করেছিলেন যে, তিনি শুনেছেন বাংলাদেশে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার অফিস রয়েছে এবং তারা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহ করে থাকে।

উপসংহার

বাংলাদেশে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কার্যকলাপ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নানা বিতর্ক ও উদ্বেগ রয়েছে। এসব তৎপরতার প্রেক্ষিতে ভারত যখন চীন-পাকিস্তান নিয়ে অভিযোগ তোলে, তখন অনেকেই এটিকে কাঁচের ঘরে বসে অন্যের ঘরে ঢিল ছোঁড়ার সঙ্গে তুলনা করেন। সত্য-মিথ্যার মাঝখানে লুকিয়ে আছে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, আঞ্চলিক রাজনীতি এবং জনগণের জানার অধিকার—যার ভারসাম্য রক্ষা করাই এখন সময়ের দাবি।

তথ্য সূত্র : দৈনিক ইনকিলাব 


নিউজটি পোস্ট করেছেন : 57wing


কমেন্ট বক্স
নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এ

নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এ